
সিলেট নগরীর কুমারপাড়া এলাকার ‘মেয়র হাউজ’ নামক সুনসান বাড়িজুড়ে শুধুই নিরবতা। চেনা রং পাল্টে যেনো বাড়িটি পাল্টে যাচ্ছে নতুন রংয়ে। ক্রমশ বিবর্ণ হতে চলেছে বাড়ির পরিবেশ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বহিস্কৃত) আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়ি; ছিমছাম সাজানো-গোছানো বাড়িটির প্রধান রাস্তা দিয়ে ঢুকেই হাতের বাম দিকের কক্ষটিই আরিফুল হক চৌধুরীর অতিথি বসার কক্ষ। পূর্বদিকের দেয়ালে কারাবন্দী আরিফুল হক চৌধুরীর ছবি। রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবি।
কক্ষটিতে একটি চেয়ার রয়েছে যেটি আরিফুল হক চৌধুরী বসার জন্য রাখা। তবে কারাবন্দী থাকার কারণে বিগত প্রায় দু’বছর ধরেই চেয়ারটিতে বসা হয়না তার। বাসার কেউও এ রুমে বেশ আসেন না। কারণ এ রুমে আসলেই তাদের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। কারাবন্দী ও অসুস্থ আরিফের কথা মনে হলে তারা ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়- বসার কক্ষে থাকা আরিফুল হক চৌধুরীর চেয়ারে জমা ধূলোও পরিষ্কার করে রাখা হয়েছিল; তার বড় মেয়ে সায়কা তাবাসসুম চৌধুরী নাহিয়া ইংল্যান্ডের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়ে এসেছেন বাবাকে দেখবেন বলে। দেশে থাকা ৬ বছরের আরেক মেয়ে আকসা হক চৌধুরী নাইফাও উদগ্রিব বাবাকে দেখবেন এই আশাতে। আর দীর্ঘদিন ধরে ঘরে শয্যাশায়ী অসুস্থ আরিফুল হক চৌধুরীর মাতা নব্বই বছর বয়সী আমিনা খাতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন ছেলেকে ফের দেখবেন বলে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। আইনী কারণে আটকে গেল দুই বছর থেকে কারাবন্দী আরিফুল হক চৌধুরীর মুক্তি। আমেরিকাতে রয়েছেন একমাত্র ছেলে আসিফুল হক চোধুরীও রয়েছেন বাবার মুক্তির প্রতিক্ষায়। দেশে যখনই ফোন করেন তখন তাকে সামাল দেওয়া অনেকটা মুশকিল হয়ে যায়।
আরিফপত্মী শ্যামা হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পুরোটাই আশাবাদি ছিলাম তার মুক্তির ব্যাপারে। সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন। তাই তার মুক্তির আশাভঙ্গ হলো। আমরা আশাবাদি আগামী কার্যদিবসে তার মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’
আরিফের মুক্তির আশায় তারা অপেক্ষায় ছিলেন- সবক’টি মামলায় জামিন হওয়ায় তারা প্রায় নিশ্চিতই ছিলেন আরিফ কারামুক্ত হচ্ছেন। কিন্তু পরে ফের সুপ্রিমকোর্টে জামিন স্থগিত হওয়ার তারা হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কুমারপাড়ার বাড়িটি হয়ে ওঠে যেনো এক মৃত্যুপুরি। এমনটিই বললেন আরিফপত্মী।
আরিফের মাতা বেশি অসুস্থ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি সন্তানের কারামুক্তির ব্যাপারে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি তার সন্তানকে আল্লাহর হাওলা করে দিয়েছেন।
এদিকে আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গৌছকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার আদালত। ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি মো. নিজামুল হকের আদালত এই আদেশ দেন। আগামী ২ জানুয়ারি বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আসবে।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বোমা হামলা মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ও প্রাক্তণ অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র (সাময়িক বহিস্কৃত) জি কে গউছকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০ ডিসেম্বর সেটি সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে সেই জামিন আদেশ স্থগিত হয়।