
কারাগারে থাকা শিল্পপতি রাগীব আলীকে শনিবার চার ঘন্টার জন্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিলো। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাকে সকাল ১০টায় হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগির মিয়া। দুপুর ২ টার দিকে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে আসা হয় বলে জানান তিনি।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, সকালে কারগার থেকে রাগীব আলীকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে তিন তলার একটি কেবনি রাখা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই সে কক্ষে প্রবেশ করেন উচ্চ আদালতের এক আইনজীবী। ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম নামের ওই আইনজীবী তারাপুর বাগানের জমিতে গড়ে ওঠা জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যাপারে রাগীব আলীর সিদ্ধান্ত জানতে চান। আদালতের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে স্থানান্তর না করায় ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম পরিবর্তন ও হস্তান্তর প্রসঙ্গে রাগীব আলীর সাথে কথা বলেন ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম।
রাগীব আলোর সাথে আলোচনা শেষে দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তারাপুর চা বাগানের সম্পত্তি নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ের প্রেক্ষিতে রিভিউ পিটিশন রায়ের অপেক্ষায় আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশেই তিনি রাগীর আলীর মতামত জানতে এসেছেন জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যাপারে রাগীব আলী কোনো সিদ্ধান্ত জানান নি। এ ব্যাপারে তিনি সময় চেয়েছেন। এ ব্যাপারে সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার সগির মিয়া বলেন, রাগীব আলীল সাথে হাসপাতালে একজন আইনজীবী কথা বলেছেন বলে শুনেছি। তবে কি ব্যাপারে কথা হয়েছে তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতের সরকারী কৌশলী মাহফুজুর রহমানও।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মাধ্যমে সিলেটের তারাপুর চা বাগান দখল ও প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের দুটি মামলায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাই কারান্তরীন রয়েছেন। এই দুটি মামলাই সিলেট মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে বিচারাধীন আছে।
৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার উপর তারাপুর চা বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। নব্বইয়ের দশকে জালিয়াতির মাধ্যমে এটি দখলে নেন রাগীব আলী। এ নিয়ে চলা মামলার প্রেক্ষিতে আদালতে একটি রিট পিটিশনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি তারাপুরে রাগীব আলীর দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। চা বাগানের জমি রাগীব আলীর দখল থেকে উদ্ধার ও সকল স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন আদালত। একইসাথে রাগীব আলী গংদের বিরুদ্ধে মামলা দুটিকে সক্রিয় করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ১০ জুলাই পিবিআই মামলার চার্জশিট দাখিল করে।
গত ১০ আগস্ট দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ওই দিনই রাগীব আলী ও আবদুল হাই পালিয়ে ভারতে চলে যান। প্রায় তিন মাস পর গত ১৩ নভেম্বর আবদুল হাই ভারতের করিমগঞ্জ থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ হয়ে ফিরলে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রাতে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। এরপর গত ২৪ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জে সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক হন রাগীব আলী।