• ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীমঙ্গলের হাইল-হাওরে চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ২১, ২০১৭
শ্রীমঙ্গলের হাইল-হাওরে চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য

খাস কালেকশন ও বিল ইজারার নামে শ্রীমঙ্গলের হাইল-হাওরে চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। শুধু তাই নয়, হাওরের বিলগুলোতে প্রকাশ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ আহরণের মহোৎসবে মেতে উঠেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল। হাওরের ছোট ছোট নালা-খাল-বিল খাস কালেকশন ও লিজের নামে পুরো হাইল-হাওর এখন ৫০ প্রভাবশালীর দখলে। বাইক্কা বিলের ঘেঁষা বেয়াইবিল, খাগউরা, চাপড়া, কুলিমারা ইত্যাদি নামীয় বিলগুলোর চতুর্দিকে মাইলের পর মাইল জাল আর পাটি বাঁধ দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। কোনো কোনোটিতে মাছ ধরার কাজে মৎস্যজীবীরা ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট ৫১টি বিল ছিল। ইতিমধ্যে ১০টা ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে টিকে আছে ৪১টি। ৬২ বিল, বকবকিয়া বিল বৈধ ইজারা ছাড়াও নামেমাত্র খাস কালেকশনের মাধ্যমে মাছ ধরা হচ্ছে পাত্র ডোবা, চরা ডোবা, ধলি ডোবা বিলে। এছাড়া ডুমের বিল, বাল্লা বিল, বড় আন্দা বিল খাস কালেকসনের প্রক্রিয়াধীন আছে। খাস কালেকশনের নামে এসব বিল লুটে খাচ্ছে একটি চক্র। তাছাড়া হাইল হাওর এলাকায় ছোটবড় প্রায় ১৫০-২০০টি ফিশারি হওয়াতে সরকারি অনেক ছোটবড় বিল এসব ফিশারির মালিকরা দখলে নিয়ে গেছে।

বাইক্কা বিলের খালগুলোতে মাছ ধরার বৈধতা আছে কি না জানতে চাইলে কর্মব্যস্ত খাগউড়া খালের মৎস্যজীবীরা জানায় “পিয়ার আলীয়ে ইতা খালের ডাক আনিয়া রাখছইন।’’ পিয়ার আলী বাইক্কা বিলের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকা সমাজ ভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন বড়গাংগিনার সভাপতি।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো অনুমতি আছে। আমরা এসব খালগুলো লিজ নিয়েই মাছ ধরে থাকি। কিন্তু যাদের লিজ নেই তারা অবৈধ।’

ইতিমধ্যে বাইক্কা বিলের চাপড়া খালে পাটি বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ বন্ধ এবং বিলে স্থাপনকৃত পাটি বাঁধ উচ্ছেদ করে বিল রক্ষার দাবি জানিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছে বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন।

হাইল হাওরের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, ‘হাইল হাওরটা একসময় পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান ছিল। হাইল হাওর এখন অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। হাওরটা এখন পাহাড়ের মাটি ছড়া দিয়ে এসে দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিলগুলোও ভরাট হয়েছে। এর ফলে এখানে মাছের ও পাখির খাবার কমে গেছে। আগে ছিল ৬২টি বিল। এখন ২২-২৩টি বিল আছে। এগুলোও প্রভাবশালী কিছু লোক লিজ নিয়ে তাদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে লাল কাপড়ের ঝাণ্ডা উড়িয়ে জবরদখল করে পুরো হাইল হাওর মাছ শিকার করে খাচ্ছে। যারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকে মাছ শিকার করতে দেয়া হচ্ছে না।’

সাবেক জেলা মৎস্য অফিসার নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘এ হাইল হাওরের ডাউনে নিচু এলাকায় কানেকটেড টু কুশিয়ারা নদীতে ওয়াটার ব্লক হয়ে গেছে। সেখানে ওয়াটার মুভমেন্ট নেই। যার কারণে হাওরে কচুরিপানায় ভরপুর হয়ে গেছে। আর হাওর ভরাট হচ্ছে পাহাড়ী মাটি ও বালি ভরাটে। এ থেকে হাওরকে বাঁচাতে হলে উপজেলার ছোটবড় ২৫০টি ছড়াতে বৃষ্টির সময় এসব বালি ব্লক দিতে হবে। আর হাওরের যেসব রিজার্ভার ভরাট হয়ে গেছে এগুলোকে এক্সেভেটার মেশিন দিয়ে খনন করতে হবে। আর যেহেতু হাওর এলাকায় কালচারাল ফিশারির দিকে ধাবিত হচ্ছে, সবমিলিয়ে ১৫০টির মতো ফিশারি হয়ে গেছে। এখানে মানুষের অবাধ বিচরণ। হাইল হাওরে যারা বিচরণ করছে এদেরই একটি গোষ্ঠী কিন্তু হাইল হাওরে বিলগুলো দখলে নিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘হাওরে কেন কালচারাল ফিশারি হবে। কালচারাল ফিশারি বন্ধ হয়ে গেলে হাওরের মানুষের বিচরণ বন্ধ হবে। মৎস্য অফিস ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারী বাড়ালে বিল সেচে, জাল দিয়ে মাছ ধরা অনেকটা কমে আসবে।’