
বাংলার আলো ডেস্ক :::::::: তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। তাই সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমকে জনগণের কণ্ঠস্বর হতে হবে। এটি যেন ভীতিপত্র, উস্কানীপত্র বা চরিত্র হননপত্র না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) সম্মেলন কক্ষে ‘সংবাদবোধ ও পাঠকের ধারণা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী একথা বলেন।
ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) ও পিআইবি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
পিআইবি মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বিশেষ অতিথি ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর সহায়তায় এমআরডিআই-এর ‘সংবাদবোধ এবং পাঠকের ধারণা বিষয়ক গবেষণা’র ফলাফল উপস্থাপন ও স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান। সঞ্চালনা করেন একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক বার্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা অবশ্যই তাদের অধিকার প্রয়োগ করবেন । সেই অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে যেন জনমানুষের অধিকার খর্ব না হয় সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। দেশের সূচনালগ্ন থেকে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সামরিক শাসন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন কোন রাজনৈতিক দলের সাম্প্রদায়িক আচরণের কারণে গণমাধ্যমের এই চর্চা অনেক সময় ব্যাহত হয়েছে। গণতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে সামরিক শাসক ও সাম্প্রদায়িক শক্তি ঘৃণিত খুনীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। গণতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে জ্বালাও-পোড়াও-এ জড়িতরা এখানে এখনও রাজনীতি করছে।’
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য সরকার কাজ করছে- উল্লেখ করে ইনু বলেন, শেখ হাসিনার সরকার অবাধ গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে পত্র-পত্রিকার ডিক্লায়ারেশন অব্যাহত রেখেছে। বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও চালু করেছে। সরকারকে উন্নয়মূলক কাজ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে জঙ্গী দমন করতে হচ্ছে। আর অপরদিকে রাজাকার, জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ করার জন্য একটি বড় রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধীদের ডাকা হরতালে সমর্থন দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এমআরডিআই সম্প্রতি ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর সহায়তায় সংবাদবোধ এবং পাঠকের ধারণা বিষয়ক একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এই গবেষণায় সাংবাদিক, সিদ্ধান্তগ্রহীতা, নীতি নির্ধারক, রাজনীতিবিদ,একাডেমিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিথি, অভিভাবক এবং তরুণ পাঠকের মতামত গ্রহণ করা হয়। গবেষণা পদ্ধতিতে- ঢাকাসহ ৬টি বিভাগে প্রশ্নমালা জরিপ ১৪০ জন, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা ৬৬ জন, বিশেষজ্ঞ সাক্ষাতকার ৩৫ জন এবং মতবিনিময়ে ৬০ জন অংশ নেন।
প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠক বা দর্শকের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন ২৪ শতাংশ, কোন কোন ঘটনার বিবরণ মনে সন্দেহ তৈরী করে ৫৮ শতাংশ এবং পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে করে ১৮ শতাংশ মানুষ।
অন্যদিকে প্রতিবেদনের সূত্রের ব্যবহার সম্পর্কে গবেষণার তথ্য হল, নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে বলা হয় ৪৯ শতাংশ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূত্রের উল্লেখ থাকে না, ঢালাওভাবে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয় ২৭ শতাংশ এবং ঘটনার সাথে সংশ্ল্ষ্টি সকল ব্যক্তির মতামত উপস্থাপন করা হয় ৪ শতাংশ।
তবে গবেষণার ফলাফল ও পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক রফিকুজ্জামান দ্বিমত পোষণ করে আরও বৃহৎ পরিসরে এই গবেষণা করলে ভালো হতে বলে মন্তব্য করেন।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খ আলী আল রাজী, দি ইন্ডিপেন্ডট-এর নির্বাহি সম্পাদক শামীম জাহেদী, এটিএন বাংলার জ.ই মামুন, ইন্ডিপেন্ডট টিভির আশিষ সৈকত, ইউএনবি’র নির্বাহি সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, যশোর থেকে প্রকাশিত গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। ১১ জানুয়ারি, ২০১৮ (বাসস)