
কারী মোঃ মোস্তাকিম আহমদ : আরবী বছরের বারতম মাস যিলহজ্জ। আল্লাহপাক ও তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক ঘোষনাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমুহের অন্যতম মাস এটি।ইমলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হল হজ্জ। আর এই মাসে আল্লাহতাআলা হজ্জ আদায়ের ফরজটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। জিলহজ্জ মাসের ১০ম দিন হচ্ছে ঈদুল আযহার দিন। এ দিনের মরতবা অপরিসীম। এ দিন সূর্যোদয়ের পরে ২ রাকাত ঈদুল আযহার নামায অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সহিত আদায় করতে হয়। এ নামাজের পরেই কুরবানী রয়েছে। কুরবানী করার অনেক মরতবা রয়েছে। কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে।
হাদীস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন- সামর্থ থাকা সত্বেও যারা কুরবানী করেনা তারা যেন ঈদগাহের নিকটবর্তী না আসে।
অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- ঈদুল আযহার দিনে কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহপাক বান্দার সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন।
অন্য হাদীস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন- যে সমস্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা হবে কিয়ামতের দিন সেই পশুগুলি কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলসিরাত পার করে বেহেশতে পৌছে দেবে। কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন সওয়ারী বা বাহন হিসাবে গণ্য হবে।
সুতরাং কানা, খোঁড়া, রোগাক্রান্ত, কানকাঁটা ইত্যাদি পশু কুরবানী করা পরিহার করত: সম্পূর্ণ দোষমুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা উচিত।তাই সকলের উচিত আল্লাহপাক ও তার হাবীবের রেযামন্দি হাছিলের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা। এর মধ্যে যেন কোন প্রকার গাইরুল্লাহ বা লৌকিকতা স্থান পায়না।
এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহপাকের দরবারে কুরবানীকৃত পশুর গোশত কিংবা রক্ত কিছুই পৌছে না। বরং শুধুমাত্র তোমাদের তাকওয়া তার দরবারে পৌছে থাকে। আল্লাহপাক দেখেন শুধু বান্দার তাকওয়া। কে তার সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করেছে আর কে গাইরুল্লাহ বা লোক দেখানোর জন্য কুরবানী করেছে।
কিন্তু, অত্যন্ত দু:খের বিষয় আজকাল কুরবানীর পশু ক্রয় করা হয় প্রতিযোগীতা করে এবং কুরবানী করার দৃশ্য ভিডিও করা হচ্ছে। অতচ, শরীয়তে এগুলো হারাম।
আজকাল দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষ লৌকিকতার ইবাদত করছে অর্থাৎ লোক দেখানোর ইবাদত করছে। মনে করছে যদি সে ৫টি গরু কুরবানী করে, তবে মানুষ তার কথা বেশি উচ্চারণ করবে।কিন্তু এগুলো হারাম। আবার দেখা যায় একজন মানুষ কুরবানী করার পর নিয়মমত বন্টন না করে তা এমনিতেই বন্টন করে। তা শরীয়তসম্মত নয়। যদি কোন মানুষ নিজের যশ-খ্যাতি লৌকিকতা ইত্যাদির নিয়্যাত করে তাহলে, উক্ত কুরবানী বাতিল হবে।
আবার বর্তমানে দেখা যায়, মানুষ কুরবানী করে ফ্রিজের মধ্যে ভরে রাখে।গরীব মিসকিন যারা আছে তাদেরকে তা বন্টন করতে দ্বিধাবোধ করে। এটা ঠিক নয়। কুরবানীর পশুর গোশত হল গরীব মিসকিনদের। তাদের হক মোতাবেক আদায় না করলে কুরবানী দূরস্ত হবেনা।
কুরবানী দাতা কুরবানী দেওয়ার পর গোশত তিনভাগ করে এক ভাগ নিজে, এক ভাগ গরীব মিসকীনকে, এক ভাগ আত্নীয়-স্বজনকে বন্টন করে দিতে হবে। এটা সুন্নত তরিকা।
কুরবানী করার সুন্নত তরিকা রয়েছে। সেই তরিকা মোতাবেক কুরবানী করা দূরস্ত।যেমন কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিন দিকে, এর পা পশ্চিম দিকে রেখে ক্বিবলামূখি করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরে কুরবানী করতে হবে।কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ ও কন্ঠনালী মাঝামাঝি স্থানে যেন জবেহ করা হয়।
কুরবানীর চামড়া নিয়ে আজকাল মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাদের কমিশন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু এই সকল কুরবানীর চামড়ার টাকা গরীব মিসকিনদের হক্ব। কিন্তু সেই হক আদায় করা হয়না। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা আবশ্যক।
বাংলার আলো/৯ সেপ্টেম্বর/ডিটি/এএ.ঘ