
বাংলার আলো ডেস্ক :::::::: সুশীলা রানী এবং নূরজাহান বেগম উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়ার বাচ্চা চাষের নার্সারি চালু করার ক্ষেত্রে আদর্শ মডেল হয়ে উঠেছেন।
সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জে একটি কাঁকড়ার নার্সারির মালিক সুশীলা রানী বলেন, তিনি ছয় মাস আগে কাঁকড়া চাষের নার্সারি শুরু করে সফলতার মুখ দেখেছেন।
শ্যামগঞ্জ উপজেলার মুন্সিগঞ্জের খামারী নুরজাহান বেগম একই সময়ে তার এলাকায় নার্সারি প্রতিষ্ঠায় পরিবারকে আর্থিক সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে গেছেন।
স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে বাচ্চা কাঁকড়ার নার্সারি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং এর মাধ্যমে চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
তিনি বলেন, যেহেতু বাচ্চা কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই অনেক কৃষক উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে কাঁকড়া নার্সারি স্থাপন করেছেন, যা তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বেশ অবদান রেখেছে।
কাঁকড়া নার্সারীর খামারী মহিলাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষকরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে বাচ্চা কাঁকড়া সংগ্রহ করে থাকেন। বেশির ভাগ সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবনের চারপাশের নদী ও নদীর চ্যানেলগুলো থেকে। মাছ ধরার বা মাছ সংগ্রহ করার সময় সাধারণত কাঁকড়া চাষীরা বাচ্চা কাঁকড়া সংগ্রহ করে থাকে।
নদী থেকে ধরার পর খামারীরা কাঁকড়ার খামারের চারপাশে ছোট ছোট পুকুর নির্মাণ করে এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে পুকুরের চারপাশে ঘিরে রাখে, যাতে বাচ্চা কাঁকড়া পালাতে না পারে।
একটি খামারে ৩০ থেকে ৪৫ দিন লালন-পালনের পর বাচ্চা কাঁকড়া মোটাতাজা হলে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করে দেয়।
সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জের কাঁকড়ার চাষের সাথে জড়িত সুশিলা রানী বলেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্র্যাকট্রিক্যাল এ্যাকশন-এর সহযোগিতায় এবং তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ লাভ করে তিনি ছয় মাস আগে একটি কাঁকড়ার নার্সারি শুরু করে লাভবান হন এবং সংসারের অভাব ঘোঁচাতে সক্ষম হয়েছেন।
সুশীলা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণত আমি ১ হাজার বাচ্চা কাঁকড়া খামারে কয়েক সপ্তাহ ধরে পালন করার পর পরবর্তীতে কিছুটা মোটাতাজা হলে তখন কাঁকড়ার বাচ্চা বিক্রি করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করি যা খুব লাভজনক। আমার স্বামী কাঁকড়ার নার্সারিতে আমাকে সাহায্য করেন এবং আমরা তাতে সাফল্য লাভ করেছি।’
কাঁকড়ার খামার পরিচালিত করার অপর একটি উদ্যোগের অধীনে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জের নুরজাহান বেগম তার এলাকার জন্য একটি আদর্শ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন।
নুরজাহান বলেন, ‘বাচ্চা কাঁকড়ার নার্সারি আমার জীবন এবং জীবিকা পরিবর্তন করেছে। একটি নার্সারি পুকুর থেকে তিন মাসের মধ্যেই আমি প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছি।’
প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশনের দক্ষতা উন্নয়ন সমন্বয়কারী (ফুড, এগ্রিকাল এ্যান্ড মার্কেটিং প্রোগ্রাম) এ জে এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার কৃষকরা কাঁকড়া নার্সারির ধারণাটি তৈরি করেছেন। কারণ, এখনো দেশে কোন কাঁকড়ার হ্যাচারি (বড় ধরনের খামার) নেই।
শফিকুল বলেন, ‘এই ধরনের কাঁকড়া নার্সারি করে অনেক পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে সাতক্ষীরাতে সংস্থাটি আটজন বাচ্চা কাঁকড়ার নারী খামারীকে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাফল্যে অনেক নারীই এ ধরনের ব্যবসায় আগ্রহ দেখিয়েছেন।’
কালিগঞ্জ উপজেলার তরিলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছুটু বলেন, তার এলাকার বাচ্চা কাঁকড়ার খামারীদের সাথে জড়িত কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলার অধিকাংশ মানুষই চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশী। প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়ার বাচ্চা চাষ খামার এখন এই এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছেÑ যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করতে পারে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রতি মাসে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বাচ্চা কাঁকড়ার চাহিদা রয়েছে এবং কাঁকড়ার খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসা শিল্পের প্রসার ঘটাতে মৎস্য বিভাগ ভূমিকা রাখছে।৫ জানুয়ারি, ২০১৮ (বাসস)