
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
বড়লেখা থানার বাগিরপার গ্রামে “শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর” আশ্রমে হামলা, একজনের মৃত্যু এবং অনেকেই আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার, দাসের বাজার ইউনিয়নের বাগীরপার গ্রামে ঐতিহ্যবাহী “শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর” আশ্রমে “রথযাত্রাকে” কেন্দ্র করে দিনভর টান টান উত্তেজনা এবং রাত আনুমানিক ১২ টায় মৌলানা কমর উদ্দিন, মৌলানা কুটু মিয়া, মৌলানা মামুনুর রশীদ, জামাল উদ্দিন, বাগিরপার মাদ্রাসার খতিব মৌলানা সাবুল উদ্দিন, এবং স্থানীয় মসজিদের ইমাম মইজ উদ্দিন সহ তাদের নেতৃত্বে উপস্থিতি শতাধিক তৌহিদী মুসলিম জনতা আক্রমণ করে এতে হঠাৎ করে কে বা কারা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটালে ঘটনাস্থলে সুহেল মিয়া নামে একজনের মৃত্যু হয় এবং অনেকে আহত হন।
জানাযায়, স্থানীয় দাসের বাজারের হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছরের মত বাগীরপার গ্রামে “শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আশ্রমে” বাৎসরিক রথযাত্রার আয়োজন করেন। ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে “গীতা পাঠ”, অনুষ্ঠানের মুল আকর্ষণ-“রথযাত্রা” এবং হরিনাম সংকির্তনের আয়োজন করা হয়। উক্ত “রথযাত্রাকে” উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন শহর থেকে শত শত ভক্ত বৃন্দের সমাগম ঘটে। কারণ “শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আখড়া” হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।
অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই নির্দিষ্ট সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠান চলতে থাকে। অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় “রথযাত্রার” প্রস্তুতি নিলে এতে বাধা দেন উপরোল্লিত স্থানীয় মৌলানা কুটু মিয়া, মৌলানা কমর উদ্দিন এবং মামুনুর রশীদ সহ তাদের ১৫/২০ জনের একটি দল। তাদের দাবি আজান চলাকালীন সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবেনা এবং অনুষ্ঠানের মুল আকর্ষণ “রথযাত্রা” শহরের বিভিন্ন রাস্তায় প্রদর্শনী করতে বাধা নিষেধ করেন এতে তাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হবে। এ বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে অনেক সময়। একপর্যায়ে ঘটনা ভয়াবহ রুপ নিতে থাকে। অবস্থার বেগতিক দেখে আশ্রমের পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে আশ্রমের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য কায়েস্ত দাস, সভাপতি বিপুল দাস, সেক্রেটারি শিবু দাস এবং আশ্রমের বৈষ্ণব প্রেমানন্দ গুরুজি মিলে তাৎক্ষনিক ভাবে বিষয়টি স্হানীয় জন প্রতিনিধি দাসের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাতাব উদ্দিন সাহেবকে অবগত করেন এবং বিষয়টি যত ধৃত সম্ভব মীমাংসা করার জন্য অনুরোধ করেন, যাতে কোন ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। স্থানীয় প্রতিনিধি তিনির সহযোগিতায় উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন এবং উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, যত দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে, মাইক বাজানোর নির্দিষ্ট সময় সীমা বেধে দেন এবং রথযাত্রার প্রদর্শনের জন্য সময়সীমা এক ঘন্টা নির্ধারিত হয় এবং সন্ধ্যা কালিন হরিনাম কির্তন রাত ১০ টার মধ্যে সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে উভয় পক্ষের সবাই জনপ্রতিনিধির নির্ধারণ করা সিদান্তকে স্বাগত জানান এবং যে যার মত চলে যান।
রাতের অনুষ্ঠানের সুচি অনুযায়ী সন্ধ্যা আরতির পর নাম সংকির্তন শেষ হলে প্রশাদ বিতরনের মধ্যে হঠাৎ করে মামুনুর রশীদ , মৌলানা কুটু মিয়া এবং কমর উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল তৌহিদী মুসলিম জনতা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে আশ্রমে উপস্থিত ভক্ত বৃন্দের উপর । তাদের তান্ডবলীলা চলতে থাকে ঘন্টা ব্যাপি, মন্দিরের মূর্তি ভাংচুর সহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত উপস্থিত ভক্ত বৃন্দের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে একপর্যায়ে হঠাত করে বিকট শব্দে একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে এবং ঘটনাস্হলে সুহেল মিয়া নামক একজনের মৃত্যু হয় এবং উভয় পক্ষের অনেকে আহত হন।
আমাদের স্হানীয় সংবাদদাতা জানান, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করছেন এবং স্হানীয় জনগণকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি । বড়লেখা থানার ওসি জানান ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্হানীয় জন প্রতিনিধি মাহাতাব উদ্দিন জানান উৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন মতবিরোধ সৃষ্টি হলে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ও তাদের সহযোগিতা নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করি কিন্তু হঠাৎ করে রাতের বেলা আক্রমনের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা যার কারণে এখন কিছু বলা সম্ভব হবে না। ঘটনার পর পরই স্হানীয় প্রসাশন যথাসাধ্য তাদের কাজ করছেন। তিনি আরও জানান আশ্রমের বৈষ্ণব প্রেমানন্দ গুরুজি সহ মন্দিরের কমিটির সদস্য বৃন্দের সাথে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে খুব শিঘ্রই বৈঠকে বসবেন ।
এ রিপোর্ট লেখার পূর্ব পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি । এদিকে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপত্তা হীনতায় আছেন এবং অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন । স্থানীয়দের ভাষ্য মত অনুষ্ঠান খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে চলছিল, স্থানীয় প্রতিনিধি যথা সাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু হঠাত্ করে শান্তি পূর্ন অনুষ্ঠানে আক্রমণ করা মোটেই ঠিক হয়নি। এ ঘটনার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দার জর উঠেছে।